Categories


কাকে বলে নাট্যকলা

আমাদের আজকের আলােচ্য বিষয় হল নাট্যকলা সম্পর্কে। সাহিত্য, চিত্র, নৃত্য, সঙ্গীত এই সমস্ত যেমন কলা হিসাবে স্বীকৃত, সেইরকম নাট্যকলাও কলা হিসাবে স্বীকৃত। কিন্তু এর মধ্যে একটা গােলযােগও আছে। একটা তফাতও আছে। তফাতটা এইরকম যে, ধরুন সাহিত্যকার, কিংবা একজন চিত্রকর বা একজন গায়ক যখন সৃষ্টি করেন তখন তিনি সােজাসুজি তাঁর পাঠক বা দর্শক বা শ্রোতা—তাঁদের জন্যই করেন। এবং সােজাসুজি তাঁদের কাছে পৌঁছেও দেন।


কিট্টু লাহিড়ীর তিন কীর্তি

কিটু লাহিড়ির আসল নাম কীর্তি লাহিড়ি। ওর ডাকনাম কিছু, কিন্তু বােধ হয় আধুনিক হবার ঝোঁকেই নিজের ডাকনামকেই স্থায়ী করে নিয়েছে। এই গােয়েন্দাটি একটু অন্য রকম। ওর যে গুরু ফটিকচাঁদ সে আরও অন্যরকম। এরই ডাকনাম বাঘা। একদিন জেল থেকে বেরিয়েই সম্পূর্ণ অপরিচিত এই ব্যক্তি হঠাৎই বাড়ির তালা খুলে ঢুকে পড়েন কিটু লাহিড়ির বাড়িতে। সেই থেকেই কিছুর কাজের-লােক, বন্ধু, সহকারি, অভিভাবক এবং মুখ্য উপদেষ্টা। বাঘাকাকা না হলে কিটু লাহিড়ির আর উপায় নেই। সমস্যার সমাধান অনেক সময়েই বাঘাকাকাই করে দেন, কিটু তাতে একটু-আধটু মন খারাপ করে, কিন্তু উপায়ই বা কি ? বাঘাকাকা জানেন অনেক কিছু মনে রাখার ক্ষমতা অসাধারণ, আর যা রান্না করেন তা খেয়ে রাজা মহারাজারাও অখুসি হবেন না !


উত্তর-পূর্ব ভারতে রবীন্দ্রচর্চা

রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ থেকে সাজাদপুরে যাওয়ার সময় নিজেদের পদ্মাবােটে করে দুটি জলপথে যেতেন। এর একটি হল—শিলাইদহ থেকে পদ্মা পার হয়ে পাবনা শহরের কাছে ইছামতী নদী ধরতেন এবং ইছামতী ধরে যেতেন। ইছামতী যেখানে হুড়া সাগরে পড়েছে, সেখানে গিয়ে তিনি হুড়া সাগর ধরে বড়ল নদীতে যেতেন। কিছুটা গিয়ে বড়লের শাখা সােনাই নদী দিয়ে রাউতাড়া পর্যন্ত যেতেন। সেখান থেকে পালকিতে সাজাদপুরে কাছারির কুঠিবাড়িতে যেতেন।


রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রাবলী

রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ থেকে সাজাদপুরে যাওয়ার সময় নিজেদের পদ্মাবােটে করে দুটি জলপথে যেতেন। এর একটি হল—শিলাইদহ থেকে পদ্মা পার হয়ে পাবনা শহরের কাছে ইছামতী নদী ধরতেন এবং ইছামতী ধরে যেতেন। ইছামতী যেখানে হুড়া সাগরে পড়েছে, সেখানে গিয়ে তিনি হুড়া সাগর ধরে বড়ল নদীতে যেতেন। কিছুটা গিয়ে বড়লের শাখা সােনাই নদী দিয়ে রাউতাড়া পর্যন্ত যেতেন। সেখান থেকে পালকিতে সাজাদপুরে কাছারির কুঠিবাড়িতে যেতেন।


কত অজানারে

ঘটনাচক্রে ওল্ড পােস্ট আপিস স্ট্রীটের আদালতি কর্মক্ষেত্রে আমাকেও একদিন এমনি অসংখ্য অপরিচিত চরিত্রের সাক্ষাৎ সংস্পর্শে আসতে হয়েছিল। সেদিন অচেনাকে চেনা আর অজানাকে জানাই ছিল আমার জীবিকার অপরিহার্য অঙ্গ। তারপর এতদিন পরে হঠাৎ একদিন টের পেলাম কখন যেন আমার আকাশও বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছে তাদের রঙে। কখন যেন নিজেরই অজ্ঞাতসারে তাদের আমি ভালাে বেসে ফেলেছি মনে মনে। জানি, আইনের সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্কটা বিশেষ মধুর নয়। অন্ততঃ সাহিত্যের কমলবনে আইনের কলরব ঠিক ভ্রমর গুঞ্জনের মতাে শােনায় না। কিন্তু এই গ্রন্থে আমি আইনকে দেখিনি। ওল্ড পোেস্ট আপিস স্ট্রীটের যে মানুষদের একদিন ভালােবেসেছিলাম তাদেরই আজ অক্ষরে আবদ্ধ করবার চেষ্টা করেছি মাত্র, আর কিছু নয়।


লাশতালাশ

ঘটনাচক্রে ওল্ড পােস্ট আপিস স্ট্রীটের আদালতি কর্মক্ষেত্রে আমাকেও একদিন এমনি অসংখ্য অপরিচিত চরিত্রের সাক্ষাৎ সংস্পর্শে আসতে হয়েছিল। সেদিন অচেনাকে চেনা আর অজানাকে জানাই ছিল আমার জীবিকার অপরিহার্য অঙ্গ। তারপর এতদিন পরে হঠাৎ একদিন টের পেলাম কখন যেন আমার আকাশও বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছে তাদের রঙে। কখন যেন নিজেরই অজ্ঞাতসারে তাদের আমি ভালাে বেসে ফেলেছি মনে মনে। জানি, আইনের সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্কটা বিশেষ মধুর নয়। অন্ততঃ সাহিত্যের কমলবনে আইনের কলরব ঠিক ভ্রমর গুঞ্জনের মতাে শােনায় না। কিন্তু এই গ্রন্থে আমি আইনকে দেখিনি। ওল্ড পোেস্ট আপিস স্ট্রীটের যে মানুষদের একদিন ভালােবেসেছিলাম তাদেরই আজ অক্ষরে আবদ্ধ করবার চেষ্টা করেছি মাত্র, আর কিছু নয়।


শ্রুতি নাটক চিত্র নাটক

শ্রুতি নাটক চিত্রনাটক। নামটা একটু অভিনব লাগছে হয়তাে। শ্রুতিনাটকের সঙ্গে তাে বিলক্ষণ পরিচয় আছে। কিন্তু চিত্রনাটক! সে আবার কী বস্তু ও চিত্রনাটক না বলে যদি চিত্রনাট্য বলি, ব্যাপারটা কিছুটা বােধগম্য হয়। সিনেমা বা দূরদর্শন ধারাবাহিক যে পাণ্ডুলিপি অনুসরণ করে তৈরি হয়, যাতে চিত্র ভাবনাও থাকে আবার সংলাপ নির্ভর নাটকও থাকে, সেটাই হল চিত্রনাট্য ওরফে চিত্রনাটক। যা আলাদাভাবে পাঠ করলে চোখের সামনে একটা ছবিও আস্তে আস্তে যেন তৈরি হতে থাকে।


চড়াই

স্টিয়ারিঙে বসে গাড়ি চালাতে চালাতে সামনের ক্ষুদে আয়নায় ও একবার নিজেকে দেখেও নিল। সদ্য চল্লিশ পেরােনাে শরীরে একটু মেদ দু’গালে একটু মাংস ওকে আরও যুবক করে দিয়েছে। কানের দু’পাশের কঁচাপাকা চুলগুলাে দেখে নিল সমীরণ। এখানেই বয়েসটা ধরা পড়ে। নিজের মনেই একবার হাসলাে। অশােক বলেছিল, ঐ একটু একটু পাকা চুল তােমাকে বেশ একটা ব্যক্তিত্ব দিয়েছে। কথাটা শুনে ও সেদিন হেসেছিল, কিন্তু চুলের ফাঁকে ফাঁকে বয়সের এই ঈষৎ বিজ্ঞাপন ও সেজন্যেই ধরে রেখেছে কিনা কে জানে। কিংবা ও বােধহয় জানে ওর চেহারার সঙ্গে ঐ সামান্য পাকা চুলের রেখা দিব্যি মানিয়ে গেছে।


আশাপূর্ণা দেবী রচনাবলী-৬ষ্ঠ খণ্ড

বাড়ি ওঠা মানেই তাে সংসারের নিত্য ছন্দ তছনছ হয়ে গিয়ে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা। আর ছেলেবেলার মনে তাে বিশৃঙ্খলাতেই উল্লাস। যেদিন বাড়ি বদল হবে, তার দু-চারদিন আগে থেকেই ওই ছন্দে হাত পড়ত, ভারী জিনিসগুলাে নড়িয়ে সরিয়ে একত্রে জমা করা হত, কাচের বাসনপত্র, মায় খেলনা-পুতুলের আলমারির সব জিনিস সাবধানে সন্তর্পণে আলাদা আলাদা ভাবে বেঁধে একধারে রাখা হত, দেয়ালের ছবিটবি নামিয়ে ফেলা হত, আমাদের কভাইবােনের বইখাতা শ্লেট পেন্সিল দোয়াত কলম প্রায় সবই প্যাক করে ফেলা হত। অতএব অবস্থাটা মনােরম তাতে সন্দেহ কী?


আশাপূর্ণা দেবী রচনাবলী ৮ম খণ্ড

রামকালীর দাদা-বৌদি সহ গুরুজন অনুজ সকলেই রামকালীর অনুগত। রামকালী অন্যায় আদেশ কাহাকেও করেন না, একথা সকলেই জানেন ও মানেন। সুচিকিৎসক রামকালী একটি বরযাত্রীর দলে পালকির মধ্যে বরকে দেখিয়া থমকাইলেন। তাহার চেহারায় ঘাের সান্নিপাতিকের আক্রমণ, মৃত্যু আসন্ন, পল্লীর এক কন্যার বিবাহ বন্ধ হইয়া পরিবারটি তদানীন্তন সামাজিক প্রথায় ঘাের অসুবিধায় পড়িবে। তিনি সামান্য কিছুকাল পূর্বে বিবাহিত ভ্রাতুস্পুত্রকে আনিয়া কন্যাটির সহিত বিবাহ দিলেন। ভ্রাতুস্পুত্রের পূর্বের সদ্যবিবাহিত বধূর জীবনে সতীন আনিবার মমর্যাতনা বুঝিবার মতাে মন সেকালের সামাজিক পরিস্থিতির প্রভাবে রামকালীর মতাে বিবেচক মানুষেরও ছিল না। কিন্তু এই ঘটনাটিই সত্যবতীর মনে দারুন আঘাত দিল। ইহা লইয়া সে পিতার সহিত তর্কে নামিতেও দ্বিধা করে নাই।


আশাপূর্ণা দেবী রচনাবলী-২য় খণ্ড

তাই মন্দির-সংলগ্ন প্রাঙ্গণে কান্তি মুখুজ্জের অনুনয় ভারি সংকটে ফেলল হেমপ্রভাকে। তিনি ভালাে করেই জানেন তার পুত্রবধূ চিত্রলেখা এ সম্বন্ধকে গ্রাহ্যই করবে না। অথচ কান্তি মুখুজ্জে হেমপ্রভার দ্বিধার সুযােগে এ সম্মতি প্রায় জোর করে আদায় করে নিলেন, বিগ্রহকে সাক্ষী মানলেন। অন্তরাল থেকে রসিক বিধাতা যেন এইভাবে দুটি কিশাের-কিশােরীর ভাগ্য নির্ধারণ করে দিলেন। পাত্র-পাত্রীর অজ্ঞাতে বা অনবধানে তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক দুজনের এই সম্পর্ক নির্ধারণ এবং পরবর্তী জীবনে তারই অনিবার্য টানাপােড়েনের জট তৈরি করার সূত্রটি শরৎচন্দ্রের উপন্যাসগুলির স্মৃতি মনে আনে। প্রতিকূল ভবিষ্যতের সঙ্গে প্রচণ্ড সংগ্রামে কার জয় কার পরাজয়—সে কাহিনীর একটা নিজস্ব টেনশান আছে। শরৎচন্দ্রীয় রীতিতেই তার সন্তোষশােভন সমাধান ঘটিয়েছেন আশাপূর্ণা।


আশাপূর্ণা দেবী রচনাবলী ৯ম খণ্ড

যেহেতু আরম্ভের আরম্ভ থাকে সেই হেতু সুবর্ণলতা-র মা সত্যবতীর জোরালাে ব্যক্তিত্বের উৎসে পৌছােতে গেলে সত্যবতীর বাবা-র সংগ্রামী ব্যক্তিত্বে গিয়ে পৌছােতে, হয়। গ্রাম থেকে বিতাড়িত সত্যবতীর বাবা আবার গ্রামেই ফিরে এসে কবিরাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। মেয়েকে তিনি প্রশ্রয়ই দিয়েছিলেন, তার নিজস্ব ন্যায়-অন্যায় বােধ যাতে জেগে ওঠে। ফলে তিনি নিজেই যখন একটি মেয়েকে আসন্ন বৈধব্য থেকে বাঁচাবার জন্যে তাঁর নিজের ভাইপাে-র স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তারই সতীন করে নিয়ে এলেন তখন ভাইপাে-র সদ্য বিবাহিত প্রথম স্ত্রীর মানসিক কষ্টের কথা একবারও ভাবলেন না। আর তখনই নিজের মেয়ের কাছেই তাঁর অবিবেচনার জন্যে স্পষ্ট কথা শুনতে হয়েছিল। ভাইপাে-র বড় বৌ-এর মনে তাে সত্যিই ‘সতীন কাটার জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিলেন বাবা!