ইভা নারিনকে দেখতে পেয়েই ছুটে গিয়ে ইভা নারিনের মুখের উপর মুখ রেখে কেঁদে উঠল তার মা মেরী মার্গারিটা ! বাবা এবং অতি আদরের ছােট বােনও তার পাশে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল। আহমদ মুসা দাঁড়িয়েছিল ডাক্তারদের পাশে নির্বাক বেদনা নিয়ে।
আহমদ মুসা ডাক্তারকে ফিসফিসে কণ্ঠে বলল, ম্যাডাম নারিনকে শীঘ্রই ও.টি-তে নেয়া দরকার। ওটি’র প্রধান ডাক্তার আরেভিক আভেডিস বলল, 'স্যার, সবে এসে বসলেন মেয়ের পাশে। কি করে বলি। আপনি আমাদের সাহায্য করুন।
আহমদ মুসা আস্তে আস্তে গিয়ে অ্যারাম আড্রানিকের পাশে দাঁড়াল। ধীরকণ্ঠে বলল, স্যার, দেরি হয়ে যাচ্ছে। ইভা নারিনকে ও.টি-তে নেয়া দরকার। | মাথা ঘুরিয়ে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। উঠে দাঁড়াল সংগে সংগেই। জড়িয়ে ধরল আহমদ মুসাকে। বলল, কনগ্রাচুলেশন আহমদ মুসা। তুমি অসাধ্য সাধন করেছ । কিন্তু ইভা মা’র একি হল? | ‘দুঃখিত স্যার, যে গুলিটা আমাকে বিদ্ধ করত, সেই গুলি সে নিজের বুক। পেতে নিয়েছে। বলল আহমদ মুসা অশ্রুভেজা কন্ঠে ।
তিতুনি চেয়ারটাতে বসল, দেখে বোঝা যায় না কিন্তু চেয়ারটাতে বসতে খুব আরাম। আশেপাশে চারিদিকে নানারকম যন্ত্রপাতি। শামীম উপর থেকে টেনে একটা হেলমেট নিচে নামিয়ে এনে তার মাথার মাঝে পরিয়ে দিল, সাথে বাইরের নানা ধরনের শব্দ কমে গিয়ে শুধু শোঁ শোঁ একটা শব্দ শুনতে পায়। চেয়ারের হাতলে তিতুনির দুটো হাত রাখা ছিল, দুটো যন্ত্র এসে হাত দুটোকে হাতলের সাথে আটকে ফেলল। তিতুনি টের পেল তার পা দুটোকেও একই কায়দায় আটকে দেয়া হয়েছে। বুকের উপর দুই পাশ থেকে দুটো চতুষ্কোণ যন্ত্র এসে আড়াআড়িভাবে তাকে আটকে ফেলেছে। তিতুনির বুকটা ধুকপুক করতে থাকে। এখান থেকে সে ছুটে বের হতে পারবে তো?
তাছাড়া যে বিষয় গুলো তিনি উল্ল্যেখ করেছেন, এসকল বিষয় গুলোর সুচিন্তিত অভিমত আর ভাবনাই রাজনৈতিক অনেক সমস্যার সুরাহা করে দিতে পারে। রাজনীতি বিষয়টা জটিল তবে লেখক বেশ সহজ এবং রম্যপ্রিয়তার মাঝে বাংলাদেশ সৃষ্টির শুরু থেকে রাজনৈতিক অবস্থা সমূহ আলোচনা করেছেন। লেখকের মতে, রাজনৈতিক সংস্কার তার উদ্দেশ্য নয়, যারা সংস্কারে আগ্রহী তাদের এই পুস্তক পাঠে উন্নতি হতে পারে। এবং যারা রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে ভাবেন না বা মাথাব্যথা নেই তারাও যেন এই বই পড়তে আগ্রহী বোধ করে তাই তিনি একটি নির্ভেজাল গবেষণা গ্রন্থ লিখেছেন রম্য রচনার ঢঙে। ভূমিকায় তিনি এই বই রচনার কারন বর্ণনা করেন এভাবে, "‘উইনস্টন চার্চিলের ভাষায় বলতে গেলে বাংলাদেশ একটি রহস্যঘেরা প্রহেলিকাচ্ছন্ন হেঁয়ালি। একদিকে এখানে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকট অপ্রতুলতা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে সুশাসনে নিশ্চিত অবক্ষয় ঘটেছে। বাংলাদেশের অনেক অর্জনের জন্য আমি গর্বিত। তবু রাজনৈতিক অবক্ষয় ও সুশাসনের ক্রমাগত অধোগতি আমার প্রজন্মের যারা আমার মতো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তাদের জন্য দৈহিক যন্ত্রণার চেয়েও মর্মান্তিক মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছে। এ গ্রন্থের জন্ম এই যন্ত্রণাবোধ থেকেই।
শূন্য নামের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখার এই হল ‘শানে নজুল।’ শূন্য বইটিতে যুক্তির চেয়ে কল্পনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখার সময় লেখককে সচেতনভাবে কল্পনা পরিহার করে যুক্তিতে থাকার চেষ্টা করতে হয়। আমি কখনো তা পারি না। আমি শ্রদ্ধা করি- যুক্তি, কিন্তু ভালবাসি-কল্পনা। আর এটা তো জাগতিক সত্য ভালবাসার এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ভালবাসাই জয়ী হয়।
ছোটাচ্চু যখন প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি খুললো টুনি নামের(টুনটুনি) ছোট্ট মেয়েটি সেই সংস্থার মেম্বার বা সহকারী গোয়েন্দা হতে চাইলো। কিন্তু ছোটাচ্চু তাকে কোন পাত্তাই দিলনা। কিন্ত মাত্র দুদিন যেতে না যেতেই দেখা গেল ছোটাচ্চু তেমন কোন সমস্যার সমাধানই করতে পারেনা। উপরন্তু টুনটুনি নামের ছো্ট্ট মেয়েটি খুব সহজেই সব গোয়েন্দাগীরি করে বের করে ফেলে। একদিন দুদিন করতে করতে এক সময় ছোটাচ্চু টুনটুনিকে মোটামুটি মুল্যায়ন করতে শুরু করে। তোমরা কি ভেবেছ? ছোট বলে তুমি গোয়েন্দা হতে পারবেনা? সেটা মোটেই ঠিক নয়।
‘দ্য আলকেমিস্ট’ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সর্বাধিক বিক্রিত পাউলো কোয়েলো এর লেখা অসাধারন একটি অনুপ্রেরনা মুলক উপন্যাস , বইটি কে ভাগ্য অনুসন্ধানের অনবদ্য এক জাদুকরী উপন্যাস বলা হয়ে থাকে । লেখক পাউলো কোয়েলোর জন্ম ব্রাজিলে । তিনি তার অসাধারন লেখালেখির মাধ্যমে অনেক দ্রুত প্রসিদ্ধি লাভ করেন । এছাড়াও বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক পঠিত লেখক হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেন । তিনি তার জীবনে বহু অনুপ্রেরনা মুলক বই লিখেছেন । এর স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেছেন । তার লেখা অন্যতম সেরা বই দ্য আলকেমিস্ট বইটি বাংলাতে অনুবাদ করেছেন অনুপ সাহা । তিনি ১৯৬২ সালে যশোরে জন্মগ্রহন করেছেন । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজী ভাষাতত্বে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন । এই পর্যন্ত তার দুইটি গল্পগ্রন্থ ও পাচটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । তার অনুবাদ করা দ্য আলকেমিষ্ট প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ।
* সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন।
* সৃজনশীল প্রশ্ন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের লেখায়।
* সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি-বিষয়ক মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণের সমন্বয়ক রবিউল কবীর চৌধুরী সৃজনশীল প্রশ্নের মৌলিক ধারণাগুলো উদাহরণসহ তুলে ধরেছেন।
* শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ মোঃ শাহজাহানের বেশ কয়েকটি লেখা রয়েছে যা সৃজনশীল পদ্ধতি বুঝতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়কেই সহায়তা করবে।
* সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ)-এর গণিতসহ সব বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির নিয়মাবলি।
* গণিতসহ সব বিষয়ের সৃজনশীল নমুনা প্রশ্ন ও উত্তর লিখেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ও সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির মাস্টার ট্রেইনাররা।
* শিক্ষকদের জন্য রয়েছে শেখানোর কৌশল, ত্রুটিমুক্ত ও ত্রুটিযুক্ত সৃজনশীল প্রশ্ন চেনার উপায়, বহুনির্বাচনি প্রশ্ন তৈরির ১৪টি নিয়ম, নমুনা নম্বর অনুশীলনসহ দরকারি আরও অনেক তথ্য।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে রাসূল ﷺ এর ব্যাপারে যেসব জীবনী লেখা হয়, সেগুলোর বেশিরভাগে দুটো জিনিস হামেশা পাওয়া যায়; রাসূলর ﷺ ৪০ বছরের পরের জীবন আর পাঠকদের মধ্যে তাঁর ব্যাপারে সম্ভ্রম জাগানো। কিন্তু এ ধরনের লেখনীতে তরুণ পাঠকেরা নিজেদের কমই খুঁজে পায়। বইগুলোতে তাঁকে এতটাই নিখুঁত পুরুষ হিসেবে তুলে ধরা হয় যে, অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে তাঁকে গ্রহণ করতে বেগ পেতে হয়। তরুণরা অনেক সময়ই তাদের জীবন ঘনিষ্ঠ সংকটের সাথে রাসূল ﷺ জীবনী মিলিয়ে নিতে পারে না।অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্য আছে ভালো ভালো উদাহরণ।’ (৩৩:২১) কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, রাসূল ﷺ এর সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক যতটা কাছের হওয়া উচিত, ততটা হয় না। শিশুরা কখনো কল্পনাও করতে পারে না তাদের প্রিয় রাসূল ﷺ একসময় তাদের মতোই শিশু ছিলেন। তিনি খেলেছেন, দৌড়াদৌড়ি করেছেন। টিনএজাররা কখনো ভাবেই না যে, তারা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হয়ে দিন পার করছে, রাসূল ﷺ কে ঠিক এমনই কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমাদের তরুণরা জানে না কীভাবে তিনি পরিবর্তনের সাথে খাপ খেয়ে নিয়েছেন, কীভাবে তিনি অচলবস্থার নিরসন করেছেন। এই বইয়ে শিশু মুহাম্মাদ, কৈশোরের মুহাম্মাদ এবং নবুওয়তের আগের যুবক মুহাম্মাদকে দেখবেন ইনশাআল্লাহ।নিঃসন্দেহে তিনি আমাদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার পাত্র। আমরা প্রিয় নেতাকে জীবনের চেয়েও ভালোবাসি। কিন্তু আমরা তাঁকে এমন সম্ভ্রম-জাগানিয়া নিখুঁত মানুষ হিসেবে তুলে ধরি যে, আমাদের সময়ে তাঁকে অনুসরণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা কেন যেন রাসূল ﷺ কে কঠিন করে উপস্থাপন করতে চাই।
মন খারাপ হলেই তাঁর টক ভেঁকুর ওঠে। সন্ধ্যা থেকে তাই উঠছে। এক ঘণ্টার মধ্যে কুড়িটা সেঁকুর উঠে গেছে। ঘণ্টায় কুড়িটা হিসাবে সেঁকুর ওঠার মতাে কারণ ঘটেছে। ইলেকশনে তাঁর মার্কা পড়েছে কুমির। এত কিছু থাকতে তার ভাগ্যে পড়ল কুমির? এই কুৎসিত প্রাণী মানুষের কোনাে উপকারে আসে বলে তাে তিনি জানেন না। ভােটাররা কুমিরের নাম শুনলেই পিছিয়ে যাবে। তিনি কল্পনায় পরিষ্কার দেখছেন, লােকে বলাবলি করছে খাল কেটে কুমির আনবেন না। সিদ্দিককে ভােট দিবেন না ।
এতদূর এসে পিছিয়ে পড়াটা ঠিক হবে কি-না তাও বুঝতে পারছেন না। টাকা খরচ হচ্ছে জলের মতাে। সব সংগঠনকে টাকা দিতে হচ্ছে। কেউ যেন বেজার না হয়। টাকা দিতে হচ্ছে হাসিমুখে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে। টাকাও যে আদর করে দিতে হয় আগে জানতেন না। কত অদ্ভুত সংগঠন যে বের হচ্ছে। আজ সকালে চাঁদা চাইতে একদল আসল। তিনি হাসিমুখে বললেন,
‘বাবারা, তােমাদের সমিতির নাম কি? বিবিসি শ্রবণ সমিতি। ‘সেটা আবার কি?
‘আমরা দল বেঁধে বিবিসি’র খবর শুনি। তারপর সেই খবর বিশ্লেষণ করি। | ভালাে। ভালাে। অতি উত্তম। বিবিসি শুনবে না তাে কি শুনবে?
আমাদের রেডিও কি আর শােনার উপায় আছে? এই নাও বাবারা পঁচিশ টাকা।
দলের প্রধান এমন ভাব করল যে সে খুবই অপমানিত হয়েছে। মুখ বেঁকিয়ে বললাে, স্যার বুঝি ভিক্ষা দিচ্ছেন?
“আরে না, ভিক্ষা কেন দিব।' ‘একটা শর্ট ওয়েভ রেডিওর দাম খুব কম হলেও দু’হাজার ।
“মিসির আলী”কে নিয়ে লেখা হুমায়ন আহমেদের দ্বিতীয় উপন্যাস “নিশীথিনী”। ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ মিসির আলি চরিত্রটির ধারণা প্রথম পান যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে, স্ত্রীর সাথে গাড়িতে ভ্রমণের সময়।চরিত্রটির ধারণা মাথায় চলে এলেও তিনি মিসির আলি চরিত্রের প্রথম উপন্যাস "দেবী" লিখেন এই ঘটনার অনেকদিন পর।”দেবী”-র পরবর্তী পর্ব নিশীথিনী। এই উপন্যাসে আমার খুব প্রিয় এটি উদ্ধৃতি-"যা আমরা বিশ্বাস করি না অথচ বিশ্বাস করতে চাই, তাই আমরা বারবার বলি।" এই গল্পটি ফিরোজকে নিয়ে। ফিরোজ মোহনগঞ্জে তার বন্ধু আজমলের বাড়ী বেড়াতে গিয়ে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে ফিরে আসে। কারণ অজ্ঞাত। হঠাৎ হঠাৎ সে হিংস্র হয়ে পড়ে। তার মাথায় খুন চেপে যায়। হিংস্র অবস্থায় তার কাছে একটি মানুষ আসে, তার সাথে কথা বলে। রাণুর মৃত্যুর পর নীলুর মধ্যে রানুর ছায়া পড়ে, নীলু রাণুর অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা বা ESP অর্জন করে।
শয়তানরা শেষ পর্যন্ত এই ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করেছে! আহমদ মুসার মনে পড়ল অনেক আগেকার কথা। ফ্রান্সে ইহুদি গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে ক্যামেরুনের এক জমিদার তরুণের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল এই পদ্ধতিতে। তারা সফল হবার আগেই আহমদ মুসা তাকে রক্ষা করেছিল। এখন আহমদ মুসার পাশে কেউ নেই আল্লাহ ছাড়া। আহমদ মুসা গভীর ভাবনায় ডুবে ছিল। শ্বেত-শুভ্র পোশাকের একজন লোক তার সামনে এসে দাঁড়াল। অপরূপ স্বর্গীয় তার চেহারা। তার দিকে চোখ তুলে চাইতেই তার দৃষ্টির স্নিগ্ধ পবিত্রতা তার হৃদয়কে ঠাণ্ডা করে দিল। সব দুর্ভাবনা তার মন থেকে মুহুর্তেই মুছে গেল। আর সেই অপরূপ স্বর্গীয় চেহারার দিকে তাকিয়ে তার মনে হলো মহাসম্মানিত কেউ। মনে হচ্ছে চিরচেনা তিনি। কে তিনি? ভাবতে গিয়ে কেঁপে উঠল তার শরীর। ভাবনা এগোতে পারল না, অভিভুত হয়ে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল আহমদ মুসা। আবেগে-উত্তেজনায় সে বাকরুদ্ধ। আর চোখ তুলে চাইবার সাধ্য তার হলো না।
সেদিন ছিল ছুটির দিন। আমি অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের রুমের সামনে সবুজ বাতি জ্বলছে। চিন্তা করলাম আজ ছুটির দিন নুরুজ্জামান সাহেব অফিসে কী করছেন? ড্রাইভারকে অফিসের মধ্যে গাড়ি ঢুকাতে বললাম। গিয়ে দেখি সেখানে আনোয়ারুল আলম (শহীদ)ও রয়েছে। তারা আমাকে বিস্তারিত খুলে বললো। জিজ্ঞাসা করলাম, আমাদের এখানে আনা হলো কেন? পুলিশ আছে, গোয়েন্দা আছে তাদের ওখানে নিয়ে যাক। বলল, পুলিশের কাছ থেকে সর্বহারার লোকেরা ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই ভয়ে এখানে রেখেছে। ব্রিগেডিয়ার সাবিহউদ্দিন, শহীদ এবং আমি সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি লোকটাকে হাত বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা আছে, আর্মির লোকজনও আছে। ওই অবস্থায় দেখে আমাদের রিঅ্যাকশন হলো - 'এই লোকটার নাম শুনলে অনেক মানুষের আহার নিদ্রা বন্ধ হয়ে যেত।
মেলা দিন আগেকার কথা। কাৎলাহার বিলের ধারে ঘন জঙ্গল সাফ করে সোভান ধুমা আবাদ শুরু করে বাঘের ঘাড়ে জোয়াল চাপিয়ে। ওইসব দিনের এক বিকালবেলা মজনু শাহের অগুনতি ফকিরের সঙ্গে কোম্পানির সেপাই সর্দার টেলারের গুলিতে মারা পড়ে মুনসি বয়তুল্লা শাহ। কাৎলাহার বিলের দুই মুনসি । বন্যায় ভেঙে পড়ে। কাৎলাহারের তীর। মুনসির নিষ্কণ্টক অসিয়তে চাষীরা হয়৷ কাৎলাহার বিলের মাবি । খোয়াবনামার শুরু । বিলের মালিকানা চলে যায় জমিদারের হাতে। মুনসির শোলোকে শোলোকে মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে বেড়ায় চেরাগ আলি ফকির। তমিজের বাপ শোলোক শোনে আর ঘুমের মধ্যে বিলে গিয়ে কাদায় পা ডুবিয়ে দেখতে চায় পাকুড়গাছের মুনসিকে। ভবানী পাঠকের সঙ্গে পূৰ্বপুরুষের জের টেনে বৈকুণ্ঠনাথ গিরি প্রতীক্ষা করে ভবানীর শুভ আবির্ভাবের। তমিজ দেখে জমির স্বপ্ন। আর চেরাগ আলির নাতনি কুলসুম খোয়াবে কার কায়া যে দেখতে চায় তার দিশা পায় না। তেভাগার কবি কেরামত শেষ পর্যন্ত আটকে পড়ে শুধুই নিজের কোটরে; সে নাম চায় বীে চায় ঘর চায়। কোম্পানির ওয়ারিশ ব্রিটিশের ডাণ্ডা উঠে আসে দেশি সায়েবদের হাতে। দেশ আর দেশ থাকে না, হয়ে যায় দুটাে রাষ্ট্র। দেশি সায়েবরা নতুন রাষ্ট্রের আইন বানায়, কেউ হয়। টাউনবাসী, কেউ হয় কন্ট্রাকটর। আবার নিজেদেশে পরবাসী হয় কোটি কোটি মানুষ। হিন্দু জমিদার নায়েব চলে যাওয়ার পরও আজাদ আর পানির পত্তন ফিরে পায় না। পাকুড়গাছ নাই। তমিজের বাপ । ভবানী পাঠক আর আসে না। বৈকুণ্ঠ নিহত। ক্ষমতাবান ভদ্রলোকের বাড়িতে চাকর হয়ে বিল-ডাকাতির আসামী তমিজ পুলিসকে এড়ায়। তেভাগার লড়াই। নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে তমিজ বেরিয়ে পড়ে তেভাগার খোঁজে। ফুলজানের গর্ভে তমিজের ঔরসজাত মেয়ে সখিনাকে নিয়ে ফুলজান ঠাঁই নেয় কোথায়! খোয়বনামা সারা। কিন্তু মোষের দিঘিরপাড়ে শুকনা খটখাটে মাঠের মাটিতে দাঁড়িয়ে কাৎলাহার বিলের উত্তর সখিনা পায় জ্বলন্ত হেঁসেলে বলকানো ভাত । খোয়াবনামা জিম্মাদার তমিজের বাপের হাত থেকে খোয়াবনামা একদিন বেহাত হয়ে গিয়েছে। এখন সখিনার খোয়াব। খোয়াবনামা স্বপ্নের ব্যাখ্যাত। কিন্তু স্বপ্নের ব্যাখ্যায় যা বিবেচ্য তা স্বপ্ন নয়, স্বপ্নদেখা মানুষ।
গৃহত্যাগী জোছনা
হুমায়ূন আহমেদ
প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই
গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে ?
বালিকা ভুলানাে জোছনা নয়।
যে জোছনায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে বলবে –
ও মাগাে, কি সুন্দর চাঁদ !
নবদম্পতির জোছনাও নয়।
যে জোছনা দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে স্ত্রীকে বলবেন -
দেখাে দেখাে নীতু চাঁদটা তােমার মুখের মতই সুন্দর।
কাজলা দিদির সাঁতাতে জোছনা নয়।
যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে।
কবির জোছনা নয়। যে জোছনা দেখে কবি বলবেন -
কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাদ।
আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার জন্যে বসে আছি।
যে জোছনা দেখামাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে -
ঘরের ভেতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর।
প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব –
পূর্ণিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে।
চারদিক থেকে বিবিধ কণ্ঠ ডাকবে – আয় আয় আয় ।
এমনকি সে জাহানারাকেও ঘরের স্ত্রী বানাতে ব্যর্থ হয়, একই সাথে সে শিউলির কাছ থেকে বিতাড়িত হয়। এসকল দিক কাসেদ চরিত্রটিকে পাঠকের হৃদয়ে হতাশার ছাপ ফেলেছে। জাহানারা ও শিউলি দুইজনই স্বচ্ছল পরিবারের আধুনিক মেয়ে। কিন্তু কাসেদের প্রতি দুর্বলতা পাঠককে বিস্মিত করে, আবার জাহানারা তার হৃদয় গহীনে কাসদেরে জন্য ভালোবাসার বীজ বপণ করলেও, কখনও প্রকাশ করেনি। এক পর্যায়ে জাহানারা কাসেদকে ভুল বোঝে এবং নিজেকে আড়ালে নিয়ে যায়। জাহানারা কেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় নিজের আত্নমর্যাদাবোধ বজায় রাখার জন্য নাকি কাসেদের কাছ থেকে অনাকাঙ্খিত আচরণের জন্য ? জাহানরা কি তবে অভিমানকেই বেশি গুরুত্ব দিল, প্রকৃত ভালোবাসার কাছে নত না হয়ে? লেখক ইচ্ছা করলে এই বিষয়টা পরিষ্কার ভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। আবার শিউলি চরিত্রটিও পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারেনি, যদিও সে পুরোপুরি সংস্কারমুক্ত এবং আধুনিক মেয়ে। অন্যদিকে, নাহার সর্ম্পূণ ব্যতিক্রম একটি চরিত্র, যার মাধ্যমে লেখক তার লেখনীর সব রহস্য লুকিয়ে রেখে, সর্বশেষে রহস্যের উদঘাটন করেছেন।
অতি বুদ্ধিমান মিসির আলি মাঝে মধ্যে ধরা খান। অনেক চেষ্টা করেও কিছু রহস্য ভেদ করতে পারেন না। Unsolved খাতায় সেই সব রহস্য লিখে রাখেন। তাঁর মনে ক্ষীণ আশা কোন একদিন এইসব রহস্যের সমাধান হবে। মিসির আলি হাল ছাড়ার মানুষ না। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা হাল ছেড়ে দেই। প্রকৃতির রহস্যের কাছে পরভূত হয়ে এক ধরনের আনন্দও পাই। “There are many things in heaven and earth” বলতে আমাদের ভাল লাগে। মানবজাতি পরাজিত সে নিয়তি ধরে নেয়। নিয়তির কাছে সমর্পণে সে কোন সমস্যা দেখে না। মিসির আমি Unsolved এ মিসির আলির কিছু গৌরবময় পরাজয়ের কাহিনী বলা হয়েছে। কাহিনীগুলি লিখতে গিয়ে আমি আনন্দ পেয়েছি।
অনেকক্ষন ধরে ফোন বাজছে নাহারের।পাশে থেকে তার মেয়ে সুমি ফোন ধরার কথা বললে নাহার বলেন তিনি অপরিচিত নম্বর ধরেন না।করেকবার ফোনখানা বেজেই গেল। কিন্তু তিনি ধরলেন না।মেয়ে বিরক্ত হলে নাহার বললেন নিজে থেকেই কল অফ হয়ে যাবে।কল কেটে যাবার ক্ষানিক বাদে আবার সেই নম্বর থেকে ফোন।শেষবার তিনি কলটি ধরে গম্ভীর গলায় বললেন হ্যালো।অন্যপাশের থেকে একজন একটু নরম গলায় বললেন এটা মিসেস নাহারের নাম্বার না? নাহার বললেন জি।তখন লোকটি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন তিনি একজন সাংবাদিক।নাম তার আমজাদ।তিনি নাহারকে অনেক কষ্টে খুজে পেয়েছেন এবং কিছু সময় চেয়ে তারা কথা বলতে লাগলেন।
দুটি বিল্ডিংই এল প্যাটার্নের এবং মুখােমুখি। দুই এল-এর বটম টিলার দক্ষিণ দিক কভার করেছে। মাঝখানে একটা স্পেস, সম্ভবত ওপাশটায় মানুষ ও গাড়ি চলাচলের জন্য। আর দুই এল-এর লম্ব দুটি কভার করেছে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্ত। টিলার উত্তর প্রান্ত উন্মুক্ত দুই এল-এর দুই লম্বের মাঝে বিরাট উন্মুক্ত চত্বর। চত্বরের মাঝখানে গােলাকার একটা শেড কয়েকটা পিলারের উপর দাঁড়ানাে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওটা বিশ্রামকক্ষ কাম রেস্টুরেন্ট।
পশ্চিমের কিছু অংশ ছাড়া এল প্যাটার্নের দুটি বিল্ডিংই জ্বলছে। চত্বরের মাঝখানের গােলাকার শেডটায় তখনও আগুন লাগেনি। উত্তর প্রান্ত দিয়েই রাস্তা উঠে এসেছে টিলায়। টিলাতে উঠেই গাড়িতে ব্রেক। কষেছে আহমদ মুসা। গাড়ি দাঁড় করিয়েই গাড়ি থেকে নামল সে। নামল ইভা নারিনও।
আমাদের আটপৌরে জীবনে মিশে থাকার পরও মিসির আলি এমন এক ক্ষ্যাপা,যে পরশপাথর খোঁজে এবং পায়ও মিসির আলি, বাংলাদেশের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় চরিত্র। মিসির আলী কাহিনীগুলো রহস্যমাত্রিক। মিসির আলির কাহিনীগুলো ঠিক গোয়েন্দা কাহিনী নয়, কিংবা 'ক্রাইম ফিকশন' বা 'থ্রিলার'-এর মতো খুনি-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া নয়, কিংবা বরং মনস্তাত্ত্বিক, বিজ্ঞাননির্ভর এবং প্রচন্ড যুক্তিনির্ভর কাহিনীর বুনটে বাঁধা। বরং অনেক ক্ষেত্রে একে রহস্যগল্প বলা চলে।