Categories


সোনার পরমতলা

হাজার বছরের বাঙালির জীবনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সবচেয়ে মহৎ ঐতিহাসিক ঘটনা। যুদ্ধ করে স্বাধীন দেশ গঠনের এই ঘটনাটিতে জড়িয়ে আছে লাখো মানুষের প্রাণ বিসর্জন ও আত্মত্যাগের কাহিনি। যাঁরা এইসব কাহিনি নিয়ে শিল্পসাহিত্য রচনা করেছেন এবং এখনো করছেন তাঁরা আমাদের বিবেকের কণ্ঠস্বর ও নান্দনিক জীবনশিল্পী। এরকমই একটি গ্রন্থ মিজানুর খান-রচিত সোনার পরমতলা। ইয়োরোপের জার্মানি আর বাংলাদেশের পরমতলা গ্রামের পরিসরে তাঁর কাহিনি বিস্তৃত। যুদ্ধ, মানুষের লড়াই, কিছু বিরোধী মানুষের নৃশংস অমানবিক কার্যকলাপ, হত্যা ও মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে মিজানুর খান দেখাতে চেয়েছেন যে, স্বাধীনতা, অসিত্মত্ব রক্ষা ও আত্মমর্যাদা বজায় রাখার লড়াইয়ের প্রাক্কালে বিশ্বের সকল দেশই এক। বিশ্বজুড়ে মানবপ্রজাতি একই নিয়তি বরণ করছে।


একাত্তরের দিনগুলি (হার্ডকভার)

জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটি খুব সাধারণ এক গল্পের অসাধারণ আখ্যান হয়ে উঠার কাহিনী। এক সাধারণ বাঙালি নারীর ব্যক্তিগত ডায়েরীর বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় দলিল হয়ে উঠার গল্প। জাহানারা ইমামের একজন সাধারণ মা থেকে শহীদ জননী হয়ে উঠার দিনলিপি। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটিতে জাহানারা ইমাম মায়ের মমতা নিয়ে, বাঙালি নারীর শাশ্বত মহিমা নিয়ে, দেশপ্রেমিকের ভালোবাসা নিয়ে একাত্তরের দিনগুলোর গল্প আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটি ডায়েরীর আদলে লেখা। এখানে পরিচ্ছেদের প্রথমেই বিভিন্ন দিনের তারিখ দেয়া এবং নিচে সেই দিনের ঘটনাপ্রবাহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ডায়েরীর তারিখ শুরু হয়েছে মার্চের প্রথম দিক থেকেই আর শেষ হয়েছে ডিসেম্বরের একদম শেষে গিয়ে। এর মাঝে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সব বড় ঘটনাই দিন অনুযায়ী অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে। ডায়েরীতে যেমন ৭ মার্চের শেখ মুজিবর রহমানের রেসকোর্স ময়দানের ভাষণের কথা বলা হয়েছে, তেমনি ভাষণ পরবর্তী মার্চের দিনগুলোতে কীভাবে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন অশুভ আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছিলো সেই গল্পও একান্তভাবে উঠে এসেছে। তারপর ২৫শে মার্চের কাল রাতের বর্ণনা বেশ বিস্তৃতভাবে এসেছে। জাহানারা ইমাম বিভিন্নজনের কাছে থেকে ২৫ মার্চ রাতের যে সব ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা শুনেছিলেন সে সবও তিনি ‘একাত্তরের ডায়েরী’ বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। তাই সে রাতের নৃশংসতার প্রায় সব দিকই এখানে উঠে এসেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের হত্যাকাণ্ড, পুরান ঢাকার হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ছোঁয়াও পাওয়া যাবে এই বইয়ে। তার পরপরই চলে আসে এই ডায়েরীর মূল আলোকপাত যেই ব্যাপারে সেই রুমীর কথা। রুমী জাহানারা ইমামের বড় ছেলে। অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন এবং মেধাবী ছেলে সে। যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানী অত্যাচারী শাসকদের প্রতি সে তীব্র ঘৃণা অনুভব করতো। তারপর যুদ্ধ যখন শুরু হল তখন পরিচিত ঢাকাকে এই ভয়ানক তাণ্ডবলীলায় বিপর্যস্ত হতে দেখে, চেনা মানুষগুলোকে নরপশুদের হাতে খুন হতে দেখে রুমী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলো না। অবশেষে তার যুদ্ধে যাবার সুযোগ এসে গেল। সে বন্ধুদের মাধ্যমে একদিন ট্রেনিংয়ে যাবার সুযোগ পেল।


বাংলাদেশ রক্তের ঋণ

* মুদ্রিত ছবি ও দলিলপত্রের তালিকা
* অবতরণিকা
* প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গুপ্ত হত্যার জন্যে অভিযুক্ত (জেনারেল কোর্ট মার্শাল কর্তৃক) ও ফাঁসিতে নিহত অফিসারদের তালিকা
* প্রথম অধ্যায় : শেখ মুজিব আর মেজরবৃন্দ
* দ্বিতীয় অধ্যায় : যাত্রায় ভুল
* তৃতীয় অধ্যায় : মানব দেবতার পতন
* চতুর্থ অধ্যায় : মুজিবের মিলিটা্রী ভীতি
* পঞ্চম অধ্যায় : দুঃসময়
* ষষ্ঠ অধ্যায় : মোশতাক রাজি
* সপ্তম অধ্যায় : শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড
* অষ্টম অধ্যায় : মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণর
* নবম অধ্যায় : পাল্টা অভ্যুত্থান ও জেলহত্যা
* দশম অধ্যায় : একটি স্মরণীয় রাত
* একাদশ অধ্যায় : জিয়া একটি নাম একটি কিংবদন্তী
* দ্বাদশ অধ্যায় : অভ্যুত্থান , বিদ্রোহ আর প্রাণদণ্ড 
* ত্রয়োদশ অধ্যায় : জেনারেল জিয়ার হত্যা পর্ব


বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বিবৃতি

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির এক অবিসংবাদিত নেতা। তিনি বাঙালি জাতির অধিকার এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন। উনিশশো বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট গঠন, আটান্নর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছিষট্টির ৬ -দফা, 


মুজিব ভাই

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি, দর্শন, কর্মময় জীবন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড এবং সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে প্রচুর গবেষণালব্ধ গ্রন্থ এবং বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। তাঁর বাহ্যিক জীবন বইয়ের পাতায় যতোটা উঠে এসেছে, ব্যক্তিগত জীবন ততোটা উঠে আসে নি। হয়তো, নেতা মুজিব ব্যক্তি মুজিবকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন বলেই। ব্যক্তি মুজিবকে বইয়ের পাতায় তুলে আনার প্রচেষ্টা বিচ্ছিন্নভাবে দেখা গেলেও তা যথেষ্ট নয়। তদুপরি তাঁর সংস্পর্শে আসা বেশিরভাগ মানুষই বেঁচে নেই, যে কারণে ভবিষ্যতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ভুল চিত্রায়নের আশংকা থেকেই যায়। শেখ মুজিবের সংস্পর্শে আসা এবং তাঁকে অনেকদিন ধরে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য অর্জনকারী সাংবাদিক এবিএম মূসা তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণায় ব্যক্তি মুজিবকে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তাঁর ‘মুজিব ভাই’ বইটিতে। এবিএম মূসা সাংবাদিকতা করেছেন প্রায় পাঁচ দশক। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নানা সংস্থায় সাংবাদিকতার সুবাদে দেশের রাজনীতির অন্দরমহলে তাঁর যাতায়াত ছিল অবাধ। বহু ব্যক্তিত্বকে কাছ থেকে দেখেছেন, দেখেছেন রাজনীতি কিংবা অন্যান্য অঙ্গনে। শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ এবং ঘনিষ্ঠতা ছিল প্রায় দুই যুগ। এবিএম মূসা ব্যক্তি শেখ মুজিবের একেবারে কাছাকাছি আসতে পেরেছিলেন। তাই তো অন্যদের কাছে যখন শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘নেতা’ বা ‘লিডার’, এবিএম মূসার মতো কিছু ঘনিষ্ঠজনের কাছে তিনি শুধুই ছিলেন ‘মুজিব ভাই’। এই মুজিব ভাইয়ের সম্বন্ধে এবিএম মূসা নানা সময়ে পত্রিকা কিংবা বিশেষ ক্রোড়পত্রে স্মৃতিচারণমূলক কিছু নিবন্ধ লিখেছিলেন।


মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড

যে কোনো দেশের কূটনৈতিক কর্মকান্ডে বিস্তর লিখিত দলিল চালাচালি হয়। আর এতে থাকে আপাতভাবে তুচ্ছ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার গুরুত্তপূর্ণ বিবরণ। যা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন তো আছেই, আরেকটি উদ্দেশ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় কিছু রেখে যাওয়া। বাংলাদেশের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ট্র্যাজেডি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সুবিদিত। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের শত শত দলিলে ওই সময়ের ঘটনাবলির রয়েছে লিখিত বিবরণ। মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড একটু ব্যতিক্রমধর্মী গবেষণাপদ্ধতি অনুসরণ করেছে। মুজিব হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত অধিকাংশ লেখা যেখানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাত্কার এবং অনুমাননির্ভর যুক্তি দিয়ে রচিত, মিজানুর রহমান খান সেগুলোর ওপর নির্ভর না করে মার্কিন মহাফেজখানা থেকে অবমুক্ত করা কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সামরিক ক্যু-এর কুশীলব এবং এ নিয়ে তত্কালীন পরাশক্তি ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করেছেন। আলোচ্য বইটিতে ভূমিকা ও উপসংহারসহ মোট ১৫টি ছোট অধ্যায় রয়েছে। এ ছাড়া এতে ছয়টি তথ্যবহুল পরিশিষ্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। মার্কিন দলিলে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান বর্ণনা করেন যে হেনরি কিসিঞ্জার এবং নিক্সন প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা পাকিস্তানের ভাঙন রোধের জন্য যে আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং এমনকি ভারত মহাসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহর ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের হুমকি দেন, তার মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত প্রভাব প্রতিহত করা।


১৯৭১ : ভেতরে বাইরে (হার্ডকভার)

গ্রুপ ক্যাপ্টেন (পরে এয়ার ভাইস মার্শাল) এ কে খন্দকার বীর উত্তম মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সার্বক্ষণিক সহকারী ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া চাকরিরত বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ। যুদ্ধের প্রায় সব নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ডে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। খুব কাছে থেকে যুদ্ধের সফলতা ও ব্যর্থতাগুলো অবলোকন করেন তিনি। যুদ্ধ পরিচালনায় মাঠপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কী কী সীমাবদ্ধতা ছিল, তা-ও তিনি জানতেন। তিনি যে অবস্থানে থেকে যুদ্ধকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, তা অন্য অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। সে অভিজ্ঞতার আলোকেই লিখেছেন ১৯৭১: ভেতরে বাইরে। বইটি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাক্রমের বর্ণনা নয়, এতে পাওয়া যাবে যুদ্ধের নীতিনির্ধারণী বিষয় এবং তার সফলতা, ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতা-সম্পর্কিত বেশ কিছু মূল্যবান তথ্য। প্রচলিত মত ও আবেগের ঊর্র্ধ্বে থেকে বাস্তবতা আর নথিপত্রের ভিত্তিতে বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন লেখক। এমন কিছু বিষয়েরও উল্লেখ আছে বইটিতে, যা নিয়ে এর আগে বিশেষ কেউ আলোচনা করেননি। লেখকের নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নথিপত্রের সমর্থন বইটির নির্ভরযোগ্যতা বাড়িয়েছে।


মার্কিন ডকুমেন্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ৭১ (হার্ডকভার)

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটা ডমিন্যান্ট বয়ান আছে আমাদের দেশে। এই বয়ান মূলত স্যেকুলারপন্থীদের তৈরি করা। সেখানে বলা হয়ে থাকে, আমেরিকা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল পক্ষে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ঠেকানোর জন্য আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। এই বয়ান তৈরি করেছে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন। আর মূলত বাংলাদেশের রুশপন্থী বামেরা এই বয়ান প্রচার করেছে। কেউ তাদের এই হেজিমনিক বয়ানকে কখনো চ্যালেইঞ্জ করেনি। আমেরিকান ডকুমেন্টগুলো অনলাইনে রিলিজ হওয়ার পরে আমরা নিখুঁতভাবে জানতে পারছি আমেরিকা আসলে কী চেয়েছিল, কেন চেয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে, নিক্সন প্রশাসন এটা জানত। এটা নিয়ে নিক্সন প্রশাসনের কোনো সন্দেহ ছিল না, বহু আগে থেকেই। আর এটা এতই অনিবার্য ছিল যে, সেটাকে ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়ার কোনো চেষ্টাও করেনি আমেরিকা। কিন্তু তাদের উদ্বেগের জায়গা ছিল ভিন্ন। সেটা হলো, পাকিস্তানের অংশে থাকা কাশ্মীর। যেন এই সুযোগে, ডিসেম্বরের যুদ্ধের শেষবেলায় ভারতীয় সব সৈন্য পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তান থেকে কাশ্মীর ছিনিয়ে নিয়ে না যায়। সেটা ঠেকানোই ছিল আমেরিকানদের উদ্বেগের বিষয়। প্রপাগাণ্ডায় আমরা শুনেছিলাম, বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া ঠেকাতে নাকি আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। এইটাও ডাহা মিথ্যা কথা। খোদ নিক্সন প্রশাসন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে নানা ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়েছিল। আমেরিকা ঠিক সেইসময়ে পাকিস্তানের মাধ্যমে চীনের বাজারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে কাজ করছিল। পাকিস্তান ছিল এই গড়ে ওঠা নতুন সম্পর্কের মধ্যস্থতাকারী। তাই আমেরিকার তরফ থেকে পাকিস্তানকে ডিল করার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সতর্কতা নিতেই হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিপুল আয়তনের মার্কিন ডকুমেন্টের কিছু নির্বাচিত ডকুমেন্ট নিয়েই এখানে আলোচনা হয়েছে, সবগুলো নিয়ে নয়। এই আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন ভূমিকা বা কূটনীতি নিয়ে যে-সব বয়ান চালু ছিল বা আছে তার সাথে আমেরিকান ডকুমেন্ট মিলিয়ে যেন পাঠক পড়তে পারেন। এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকে আবারো মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন ভূমিকা মূল্যায়ন করতে পারেন সেই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই ডকুমেন্টগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। এই সিরিজটি মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের জানা-বোঝার জায়গাগুলো আরো পরিচ্ছন্ন করতে পারবে বলে আমাদের আশাবাদ।


কারাগারের রোজনামচা (হার্ডকভার)

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেছেন । বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিজের জীবনের সব আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন । তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে বন্দি জীবন যাপন করেন । বার বার গ্রেফতার হন তিনি । মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হয় । আইয়ুব-মোনায়েম স্বৈরাচারী সরকার একের পর এক মামলা যেমন দেয়, সেই মামলায় কোনো কোনো সময় সাজাও দেয়া হয় তাকে । তাঁর জীবনে এমন সময়ও গেছে, যখন মামলার সাজা খাটা হয়ে গেছে, তারপরও জেলে বন্দি করে রেখেছে তাকে । এমনকি বন্দিখানা থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন নাই, হয় পুনরায় গ্রেফতার হয়ে জেলে গেছেন অথবা রাস্তা থেকে- গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। ভাষা আন্দােলন বঙ্গবন্ধু শুরু করেন ১৯৪৮ সালে। ১১ই মার্চ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং গ্রেফতার হন । ১৫ই মার্চ তিনি মুক্তি পান। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সমগ্ৰ দেশ সফর শুরু করেন। জনমত সৃষ্টি করতে থাকেন। প্রতি জেলায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন । ১৯৪৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ফরিদপুরে গ্রেফতার করে । ১৯৪৯ সালের ২১শে জানুয়ারি মুক্তি পান। মুক্তি পেয়েই আবার দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টির জন্য সফর শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবির প্রতি তিনি সমর্থন জানান এবং তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে আন্দোলনে অংশ নেন । সরকার ১৯৪৯ সালের ১৯শে এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। জুলাই মাসে তিনি মুক্তি পান। এইভাবে কয়েক দফা গ্রেফতার ও মুক্তির পর ১৯৪৯ সালের ১৪ই অক্টোবর আর্মানিটােলা ময়দানে জনসভা শেষে ভুখা মিছিল বের করেন। দরিদ্র মানুষের খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিল করতে গেলে আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। এবারে তাকে প্রায় দু’বছর পাঁচ মাস জেলে আটক রাখা হয়। ১৯৫২ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন।


শেষ চিঠি (হার্ডকভার)

একজন মায়ের কাছে তার সন্তান কতটুকু আদরের তা কাউকে কখনও বলে বোঝানো যায় না। সেই বোঝে যে প্রচন্ড কষ্ট, ত্যাগ আর ধৈর্য্যের বিনিময়ে সন্তান তার নিজের শরীরে ধারন করে, সেই সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসে আর লালন-পালন করে যোগ্য সন্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। সেই সন্তান হারা মায়ের কষ্ট কতটুকু কেউ কোনদিন বুঝতে পারে? নাকি বোঝা কোনদিন সম্ভব? একজন মাই জানে তার সন্তান হারানোর বেদনা কতটা গভীর, যন্ত্রণাদায়ক, সেই সময় কতটা নির্মম। মা-সন্তানের সম্পর্ক দুনিয়ার সবচেয়ে মধুরতম সম্পর্ক। আর সেই সন্তান যদি হয় প্রথম সন্তান তবে তার প্রতি ভালবাসাটা যেন একটু বেশিই থাকে। আমি একজন মা। তাই আমি জানি আমি সন্তানের একটুখানি কান্না, অভিমান, কষ্ট আমার জন্য কতটা যন্ত্রণাদায়ক। বর্তমান কালে আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ছিলেন বলব না। এখনও আছেন। এখনও বইমেলায় তার বই সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় থাকে। আমরা সবাই জানি দূরারোগ্য কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি আমাদের ফেলে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।


একাত্তরের চিঠি

এই এতটি বছরের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশকে জানল, চিনল এবং বুঝতে পারল সবুজ শ্যামল প্রকৃতির কাদামাটির মতো নরম বাঙলি প্রয়োজনে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।'' আর এই বাঙালির দেশপ্রেম, প্রত্যয়, দৃঢ়তা, মুক্তির অনির্বাণ আকাঙ্ক্ষা এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে আবেগ মিলেমিশে একাকার হয়ে এক অনির্বচনীয় 'মুক্তিযুদ্ধ' স্বাধীন বাংলাদেশকে জন্ম দিচ্ছিল। দেশপ্রসবকালিন সেই সময়ের অসাধারণ নিখাদ দলিল ‘একাত্তরের চিঠি’ ।


নিষিদ্ধ লোবান (প্রথম প্রকাশ ১৯৮১) (হার্ডকভার)

মুহূর্তের ভেতর ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুজন। নিঃশব্দে একের পর এক লাশগুলো টেনে এন তারা জড়ো করতে থাকে। সময় অতিক্রান্ত হতে থাকে। চাঁদ আরো সরে আসে। আকাশে আজ মেঘ নেই। চত্বরের ওপর বীভৎস শ্বেতীর মতো ছেঁড়া আলো পড়ে থাকে।


একাত্তর এবং আমার বাবা (হার্ডকভার)

ধান ভাণতে শিবের গীত গাইছি, মুলবিষয়ে ফিরে আসি। এ বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, এখানে আমরা দেখতে পাবো এক অন্য হুমায়ূন আহমেদকে। যে হুমায়ূন আহমেদকে আমরা চিনি “গল্পের জাদুকর” হিসেবে, তখনো তিনি তা হয়ে ওঠেননি। “একাত্তর এবং আমার বাবা” বইয়ে তাঁর লেখার হাত অনেকটাই কাঁচা, কিন্তু বাবার জন্যে তীব্র আকুতি, প্রচন্ড ভালোবাসা প্রতিটি অক্ষরের মধ্যেই ছিলো প্রবল। আরেকটি বিষয়, বইটির সাথে মূল পাণ্ডুলিপির স্ক্যান করা কপিও সংযুক্ত করা হয়েছে। মানে, এক পৃষ্ঠায় থাকবে টাইপ করা অক্ষর, পাশের পৃষ্ঠাতেই পাওয়া যাবে মূল পাণ্ডুলিপি, হুমায়ূন আহমেদের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি।


আমি বিজয় দেখেছি

বেপরোয়া ও অপ্রতিরোধ্য, দুঃসাহসী অথচ সংযত ও সহিষ্ণু ৬৩ বছর বর্ষীয় ‘চির যুবা’ এম আর আখতার মুকুল-সেই যে ছোটবেলায় বাঙালি ঘরাণার রেয়াজ মাফিক দু’দুবার বাড়ি থেকে পলায়ন-পর্ব দিয়ে শুরু করেছিলেন জীবনের প্রথম পাঠ-তারপর থেকে আজ অবধি বহু দুস্তর ও বন্ধুর চড়াই-উৎরাই, বহু উথান-পতন ও প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেতে হলেও আর কখনও তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি; রণে ভঙ্গ দিয়ে পিছ পা হননি কোনও পরিস্থিতিতেই। যা আছে কপালে, এমন একটা জেদ নিয়ে রুখে দাঁড়েয়েছেন অকুতোভয়ে। যার ফলে শেষ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই তার ‍বিজয়ী মুকুটে যুক্ত হয়েছে একের পর এক রঙ্গিন পালক। জীবিকার তাগিদে কখনও তাকে এজি অফিসে, সিভিল সাপ্লাই একাউন্টস, দুর্নীতি দমন বিভাগ, বীমা কোম্পানিতে চাকুরি করতে হয়েছে। কখনও আবার সেজেছেন অভিনেতা, হয়েছেন গৃহশিক্ষক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার, বিজ্ঞাপন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সুদূর লন্ডনে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কাটার। প্রতিটি ভূমিকাতেই অনন্য সাফল্যের স্বাক্ষর। কখনও হাত দিয়েছেন ছাপাখানা, আটা, চাল, কেরোসিন, সিগারেট পুরোনো গাড়ি বাস -ট্রাকের ব্যবসায়। করেছেন ছাত্র রাজনীতি। ১৯৪৮-৪৯ সালে জেল খেটেছেন। জেল থেকেই স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। অংশগ্রহণ করেছেন ভাষা-আন্দোলনে, হাসিমুখে বরণ করেছেন বিদেশের মাটিতে সাড়ে তি ন বছরের নির্বাসিত জীবন; যখনই যা-কিছু করেছেন, সেটাকেই স্বকীয় মহিমায় সমুজ্জ্বল করে তুলেছেন। সাবাংদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন প্রায় দুই যুগের মতো। কাজ করেছেন বেশ কিছু দেশী-বিদেশী পত্র-পত্রিকা ও বার্তা সংস্থায়-বিভিন্ন পদ ও মর্যাদায়। বেশিরভাগ সময় কেটেছে দুর্ধর্ষ রিপোর্টার হিসেবে। সফরসঙ্গী হয়েছেন শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, ইস্কান্দার মীর্জা, আইয়ূব খান, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন, ভুট্টোর মতো বড় নেতাদের। সাংবাদিক হিসেবে ঘুরেছেন দুই গোলার্ধে্বর অসংখ্যা দেশে। দেখেছেন বিচিত্র মানুষ, প্রথ্যক্ষদর্শী হয়েছেন বহু রুদ্ধশ্বাস চাঞ্চল্যকার ঘটনা প্রবাহের, সাক্ষী ছিলেন বহু ঐতিহাসিক মুহূর্তের। বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ জীবন। বঙ্গবন্ধুর উষ্ণ সান্নিধ্যে ও ভালবাসা তার জীবনের এক অভিস্মরণীয় স্মৃতি।


নিতুর ডায়েরি ১৯৭১

নিতু মনের খেয়ালে ডায়েরি লিখতে শুরু করে ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে। সে তখন ১৩ বছরের কিশোরী। নিতু তার মনের সুন্দর ভাবনাগুলো ডায়েরিতে লেখে। গ্রামে ঘটে যাওয়া মজার ঘটনা লেখে। নিতুদের সাজানো গোছানো পরিপাটি সংসার। সেই ভালোবাসাময় সংসারের কথা জানা যায় নিতুর ডায়েরি থেকে। মার্চের ২৫ তারিখ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি মিলিটারি ঝাঁপিয়ে পড়ে এই দেশের নিরপরাধ মানুষের উপর। শুরু হয় যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। যুদ্ধের আঁচ লাগে নিতুদের গ্রামে। কাজলরেখা নদী দিয়ে মানুষের লাশ ভেসে যায়। নিতু ডায়েরিতে লেখে সেইসব কথা। নিতুর ডায়েরি সাক্ষী হয় মুক্তিযুদ্ধের। বাবা, বড় ভাই, হাসান স্যার, যতিন মাস্টার সকলেই যুদ্ধে চলে যান। পাকিস্তানি মিলিটারিরা নিতুদের ইশকুলে ক্যাম্প করে। তারা উর্দু স্যার আর হাশিম মৌলানাকে মেরে ফেলে। লতিফ মামু পাকিস্তানি মিলিটারিদের সঙ্গে হাত মেলায়। নিতুদের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ সংকট। পাকিস্তানি মেজর ইশতিয়াক নিতুর বড় বোন মিতুকে বিয়ে করতে চায়। যুদ্ধ থেকে বড় ভাই আসে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। পাকিস্তানি মিলিটারিদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যায় সে। মিতু পাকিস্তানি মিলিটারির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। বাবার ফেরার প্রতীক্ষায় থাকে নিতু। সেই প্রতীক্ষা দীর্ঘতর হয়। যুদ্ধ মানবতার বিপক্ষে দাঁড়ায়।


সিলেটে যুদ্ধাপরাধ ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির অসম সাহস ও বীরত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে জেগে থাকে মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধকালে দেশে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসে তার নজির নেই। সিলেটে যুদ্ধাপরাধ ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র গ্রন্থে স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুদের চিহ্নিত করেছেন অপূর্ব শর্মা। তিনি ১৯৭১ সালে সিলেটে যুদ্ধাপরাধীদের শনাক্ত করেছেন দীর্ঘ পরিশ্রমে। সেইসঙ্গে গণহত্যা ও পাকিস্তানিদের ভূমিকা বিশেস্নষণ করেছেন প্রাসঙ্গিক দলিলপত্রসহ। গবেষকের দৃষ্টি নিয়ে তিনি এ-কাজটি করেছেন।