হাসান আজিজুল হক মানেই এক বিস্ময়। কারণ তার লেখার অসাধারণ ক্ষমতা তাকে করেছে জীবন্ত কিংবদন্তী। আর কিংবদন্তীদের জীবন কেমন হয়, তা তো অনেকেরই জানা। মানে, অসম্ভব রোদরঙা। সেই রোদরঙা জীবনকেই আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তিনি। ফিরে যাই ফিরে আসি’র পর তার জীবনের আরো এক অধ্যায়ের নাম ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’।
কিন্তু তার পরও ফুলকে ত্যাগ করা সম্ভব হয় নি সুভাষের। ফুল ফুটুক’ নামে অত্যন্ত আশাবাদী মন নিয়ে লিখেছেন পুরাে একটি কাব্যগ্রন্থ; যেমন লিখেছেন ভিয়েতনামের কবি তাে হু। তাে হুর ব্লাড গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ার্স' কাব্যে ফুলের প্রতি অনুরাগ-বিরাগ দুটোই আছে। সুভাষের সঙ্গে মিলে যায় এ কবির চিন্তাধারা, উদ্দেশ্য। ঔপনিবেশিকতার অধিকারে থেকে তাে হু যে কবিতাগুলাে লিখেছেন,
ওই বয়সেও ওরা হাফপ্যান্ট পরত, আমরা অবশ্য ধূমপান করতাম না, খেলাধুলাের মধ্যে তাদের সবচেয়ে পছন্দ ছিল ফুটবল আর আমরা ঢেউয়ে লাফ দিতে শিখছিলাম, ঝাপ দিতাম উঁচু “টেরেস”টার দোতলা থেকে, হ্যা, ওরা চঞ্চল, দুষ্টু, বাঁধনহারা, কৌতূহলী, ভীষণ উদ্যমী আর সাহসী। ওই বছর শোম্পানা স্কুলে ভর্তি হল কোয়েইয়ার। ব্রাদার লেওনসিও, জানি, জানি, একটা নতুন ছানা ঢুকেছে, ক্লাস থ্রি, সেকসন-এ, তাই না ব্রাদার? হ্যা, ব্রাদার লেওনসিও মুখের ওপর থেকে চুলের গােছা সরিয়ে নেয়, সে একদম চুপ করে যায়।
এরকম করেই ঘটনাটা শুরু হয়েছিল। আমি সেই মহৎ মানুষটিকে কিছুই বলিনি। এখন কৃতিত্ব দাবি করাটা শক্ত; কারণ আমার মনে হয় না যে, যখন তাকে প্রথম দেখি তখন পর্যন্ত তার নামটি আমি শুনেছি। ব্রাউনিং, শেলি এবং তাদের মতাে ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে যতটুকু পড়েছি, ততটুকুই ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে আমার জানা। মহাত্মা গান্ধির ডাকে সাড়া দিয়ে গর্ধোপের মতাে ইংরেজি শিক্ষা ছেড়ে দেওয়ার আগে বছরখানেক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা পড়া করেছিলাম আমি। আমার বন্ধু এমনকি শত্রুদের সমৃদ্ধি অর্জন ও সম্মানিত হয়ে ওঠা দেখেও ইংরেজি শিক্ষাকে নিজের জীবনের জন্য নিঃস্প্রেয়ােজন মনে করেছিলাম। যদি ও সেটি একটি বিশাল ব্যাপার। সে সম্পর্কে তােমাকে অন্য সময়ে বলব।
মে মাস। এয়েমেনেমে এখন গরম। সময়টা যেন গভীর ভাবের। এখানকার দিনগুলাে এখন দীর্ঘ এবং সঁতসেঁতে। প্রবহমান নদীটি ক্ষীণস্রোতা। কেবল হলুদ রং ধরেছে আমগাছে। ডালে কাকগুলাে এই কাঁচাপাকা আম নিয়েই মহাব্যস্ত। চারদিকের গাছগুলাে মরা সবুজ। কলা পেকে লাের গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাকা ফলের মাদকগন্ধে নীল মাছি হাওয়ায় উড়ছে ভনভনিয়ে। স্বচ্ছ কাচের জানলায় ধাক্কা খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে তীব্র রােদের নিচে।
অথচ প্রতিদিন স্বাতি জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে... জামিল রিকশায় বসেই দৃশ্যটা দ্যাখে। তারপর ভাড়া মিটায়, তারপর ক্রমাগত সিঁড়ি টপকে একদম দোতলায়। প্রায় প্রতিদিনই, কোনােদিন তাই কলিংবেল বাজাতে হয় নি। স্বাতিই দরজা খুলে দেয়, দরজার সামনে গা ভর্তি থকথকে ঘাম নিয়ে দাঁড়িয়েও থাকতে হয় না। স্বাতি সন্ধ্যার দক্ষিণে হাওয়া। যত সমস্যাই থাকুক মাথায়, জামিলকে দেখে রােজই একমাপের এক টুকরাে হাসি এবং পারফিউমসহ চমৎকার আহ্বান। তারপর শার্ট, কোট খুলে দেওয়া, অবশ্য জুতাে জামিলই খােলে, জুতােতে কেমন বাধাে বাধাে ঠেকে। তারপর ফ্যানের সুইচটাও স্বাতিরই আঙুলের স্পর্শে জেগে ওঠে
ধাতব চাকার নিচে পিষ্ট হবার আগে আমি
বুঝতে পারলাম সবচেয়ে সুন্দর হলাে জোছনা,
আর সবচেয়ে মায়াবতী চাঁদ।
আমি হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইলাম জোছনা,
তাকাতে চাইলাম গােলগাল চাঁদের দিকে,
এক ঝাপটা অন্ধকার এসে চিতার মতাে
লাফিয়ে পড়লাে চোখের ওপর,
আমি অন্ধকার ঠেলে মুঠো মুঠো
জোছনা নিয়ে উড়তে থাকলাম পাখির মতাে।
অবশ্য, উপরিউক্ত প্রশ্নের একান্ত ব্যক্তিগত উত্তরও রয়েছে। বিজ্ঞান আমাদের জানা বিষয়ের জ্ঞান প্রদান করে। কিন্তু আমরা খুব সামান্য বিষয়ই জানতে পারি। আমরা কতটুকু জানতে পারি না তা যদি ভুলে যাই, তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আমরা উদাসীন হতে পারি। অপরপক্ষে, বিশ্বজগৎ সম্পর্কে আমাদের যেখানে অজ্ঞতা রয়েছে সেখানে ধর্ম বিশ্বজগৎ সম্পর্কে এমন এক বিচারবিযুক্ত বিশ্বাসের সৃষ্টি করে যে, বিশ্বজগৎ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আছে। এরূপ বিচারবিযুক্ত বিশ্বাস সৃষ্টির দ্বারা ধর্ম বিশ্বজগতের জ্ঞান সম্পর্কে অযৌক্তিক আস্ফালন প্রকাশ করে। তীব্র আশা-নিরাশার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বেদনাদায়ক। কিন্তু আমরা যদি সুখদায়ক রূপকথা ব্যতীত জীবনধারণ করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই দুঃখবেদনা ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করতে হবে। তাই দর্শনের উত্থাপিত প্রশ্নসমূহকে ভুলে যাওয়া আমাদের জন্য যেমন শুভ হবে না তেমনি সেসব প্রশ্নের সন্দেহাতীত উত্তর পেয়েছি বলে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। আমাদের যুগে যারা দর্শনচর্চা করেন তাদেরকে দর্শন এখনাে প্রধানত যে শিক্ষা দেয় তাহলাে, নিশ্চয়তা ব্যতীত কীভাবে জীবনযাপন করা যায়, এবং নিশ্চিত জীবন না থাকলেও কীভাবে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মাঝে অসহায় না হয়ে জীবনযাপন করা যায়।
নবীন এই কবির কাব্যভাষা ও নির্মিতি ভিন্ন এক আবহ সৃষ্টি করে।আমরা পেয়ে যাই এই তরুণ কবির মধ্যে ভিন্ন এক জগৎ। ভাষা ও বক্তব্যের ভিন্ন সুর আমাদের চেতনাকে প্রসারিত করে।কবির এই নির্মাণ ও সৃষ্টি আধুনিক বাংলা কবিতার অভিযাত্রায় সাধনা ও সিদ্ধিতে এক পথ নির্মাণ করবে। আর এই স্বীকৃতি কবিকে প্রেরণা জোগাবে এই আশা করি। কবিকে অভিনন্দন।আহমাদ মোস্তফা কামাল তাঁর জন্ম ১৪ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালেবর্তমানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে কর্মরতঅন্ধ জাদুকর আহমাদ মোস্তফা কামাল প্রকাশক : পাঠসূত্র প্রতিটি মানুষ আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখের মধ্যেও জীবনের ছন্দকে খুঁজে বেড়ায় বটে; কিন্তু সে কি কিছু পায়? এই খোঁজা ও তাড়না তাকে করে তোলে নিঃসঙ্গ। এভাবে হয়ে ওঠে সে ভিন্ন। এই বোধ আধুনিক বোধ। নবীন কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল এই সময়ের আশ্চর্য বোধকে রূপায়িত করেন তাঁর কলমে।অন্ধ জাদুকর উপন্যাসে নায়কের জীবনবোধের সঙ্গে যে-সম্পর্ক ও সম্পর্কহীনতা, মানুষের সঙ্গে মানুষের ও পরিবেশের সংযোগহীনতা তাঁকে তাড়া করে। এই বোধ তাঁকে কোনোকিছুর সঙ্গে মেলাতে পারে না। সেজন্য সে হয়ে পড়ে নিঃসঙ্গ।
হাজার বছরের বাঙালির জীবনে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সবচেয়ে মহৎ ঐতিহাসিক ঘটনা। যুদ্ধ করে স্বাধীন দেশ গঠনের এই ঘটনাটিতে জড়িয়ে আছে লাখো মানুষের প্রাণ বিসর্জন ও আত্মত্যাগের কাহিনি। যাঁরা এইসব কাহিনি নিয়ে শিল্পসাহিত্য রচনা করেছেন এবং এখনো করছেন তাঁরা আমাদের বিবেকের কণ্ঠস্বর ও নান্দনিক জীবনশিল্পী। এরকমই একটি গ্রন্থ মিজানুর খান-রচিত সোনার পরমতলা। ইয়োরোপের জার্মানি আর বাংলাদেশের পরমতলা গ্রামের পরিসরে তাঁর কাহিনি বিস্তৃত। যুদ্ধ, মানুষের লড়াই, কিছু বিরোধী মানুষের নৃশংস অমানবিক কার্যকলাপ, হত্যা ও মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে মিজানুর খান দেখাতে চেয়েছেন যে, স্বাধীনতা, অসিত্মত্ব রক্ষা ও আত্মমর্যাদা বজায় রাখার লড়াইয়ের প্রাক্কালে বিশ্বের সকল দেশই এক। বিশ্বজুড়ে মানবপ্রজাতি একই নিয়তি বরণ করছে।
এর বছর কয়েক পর মেক্সিকোতে বেড়াতে গেলেন স্টেইনবেক। মেক্সিকোর সেই সময়ের বিখ্যাত চিত্র পরিচালক এমিলি ফার্নান্দেজের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হলাে। ফার্নান্দেজ তাঁকে প্রস্তাব দিলেন একসঙ্গে কিছু কাজ করার। ঠিক হলাে মেক্সিকোর মানুষের জীবন নিয়ে একটি বই লিখবেন। স্টেইনবেক। স্ক্রিপ্টও তৈরি করবেন তিনি। বইটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেবেন ফার্নান্দেজ।
ইমতিয়ার শামীম আমাদের ছোটগল্পে ভিন্ন বিষয় ও স্বর নিয়ে বিরাজ করছেন। তাঁর গল্পে বাংলার সমাজ ভূগোল রাজনীতি আলাদা মাত্রা পায়। জীবন ও বাস্তবতার আনাচে-কানাচে তাঁর গহন অবগাহন ও নিবিড় আলোকপাত আমাদের বিস্মিত করে। তাঁর চরিত্রদের ও তাদের পরিপার্শ্ব তিনি এমন সূক্ষ্ম ও বিস্তারিত করে তুলে ধরেন যে, তাদের জীবনসমগ্র আমাদের চোখে আয়নার মতো দৃশ্যমান হয়। এই বইয়ের অধিকাংশ গল্পে বাংলার গ্রামজীবন ও এর শেকড় ধরে থাকা দরিদ্র ও প্রায়-উন্মূল মানুষের বাসনা কামনা স্বপ্ন দ্বন্দ্ব আর হাস্যকরুণ অন্তর্গত বাস্ততা তাঁর কলমে তীব্রতা ও রসবোধ নিয়ে জেগে উঠেছে। অন্যদিকে মানুষের দস্যুতা, লোভ ও ভোগপ্রবৃত্তির কারণে ক্রমশ বিলীয়মান বাংলার নিসর্গ ও ভূগোলের বিবরণ তিনি তুলে এনেছেন গভীর বেদনায়। রূপসী বাংলা পর্বের কবিতায় জীবনানন্দ লিখেছেন ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’র কথা, আর ইমতিয়ার শামীম তাঁর গল্পে তুলে ধরেছেন বিধ্বস্ত বাংলার গাঢ় বয়ান। সৈকত হাবিব কবি
প্রশ্নপুস্তক গ্রন্থে নেরুদা সৃষ্টি করেছেন গভীরতর অর্থে এক ভঙ্গুরতা এবং অন্তর্দৃষ্টি যা তাঁর আগেকার গ্রন্থগুলাে থেকে আলাদা। এই কবিতাগুলাে একীভূত করে শিশুর বিস্ময়ের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কের অভিজ্ঞতাকে। একজন বয়স্ক লােক সচরাচর তার যৌক্তিক মনের মালমশলা দিয়ে শিশুর অযৌক্তিক প্রশ্নগুলাের সঙ্গে লড়াই করে। সেখানে নেরুদা চেয়েছেন পরীক্ষিত একটা জীবন থেকে পাওয়া স্বচ্ছতা, যৌক্তিক মনের খোয়াড়ে আবদ্ধ হতে তিনি চাননি। ৭৪টি কবিতার সিরিজে ৩১৬টি প্রশ্নের কোনােটারই যৌক্তিক উত্তরের কোনাে অস্তিত্ব নাই। প্রশ্নগুলাে চিন্তার এমন একটা উপরিতলকে হাজির করে যাতে কারাে নিজের মুখটাই কেবল অধিগম্য হয়।
সূচিপত্র
প্রথম অধ্যায় : আধুনিক শিক্ষাতত্ত্ব
দ্বিতীয় অধ্যায় : শিক্ষার লক্ষ্য
তৃতীয় অধ্যায় : চরিত্রের শিক্ষা
চতুর্থ অধ্যায় : ভয়
পঞ্চম অধ্যায় : খেলা ও কল্পনা
ষষ্ঠ অধ্যায় : সৃজন কার্য
সপ্তম অধ্যায় : স্বার্থপরতা ও সম্পত্তি
অষ্টম অধ্যায় : সত্যবাদিতা
নবম অধায় : শাস্তি
দশম অধ্যায় : অপর শিশুর সাহচর্য
একাদশ অধ্যায় : স্নেহ ও মনোবেদনা
দ্বাদশ অধ্যায় : যৌন শিক্ষা
ত্রয়োদশ অধ্যায় : নার্সারি স্কুল
ষোড়শ অধ্যায় : বিদ্যালয়-জীবনের শেষ কয়েক বৎসর
সপ্তদশ অধ্যায় : দিবা স্কুল ও বোর্ডিং স্কুল
অষ্টাদশ : বিশ্ববিদ্যালয়
ঊনবিংশ অধ্যায় : উপসংহার